“প্রতিটি রাস্তায়, প্রতিটি জানালায়
হাসিমুখ হাসিমুখে আনন্দধারা
তুমি চেয়ে আছো তাই, আমি পথে হেঁটে যাই
হেঁটে হেঁটে বহুদুর বহুদুর যেতে চাই”
হাসিমুখ হাসিমুখে আনন্দধারা
তুমি চেয়ে আছো তাই, আমি পথে হেঁটে যাই
হেঁটে হেঁটে বহুদুর বহুদুর যেতে চাই”
গল্পের শুরু
তারা(জিয়া, বুলবুল, জুয়েল) সবাই পড়তো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এ। এতো এতো বেশি সময় এখানে কেটেছে যে, ওদের ধারণা এমনকি এখানকার প্রতিটি ঘাসও তাদের কথা জানে। আর ছাত্র-শিক্ষক ও বন্ধুদের কথা তো বলাই বাহুল্য। এই ছেলেগুলো সারাদিন গিটারে টুংটাং শব্দ তুলে, গলা ছেড়ে গান করতো। আর আশেপাশের সবাই এদের এই ‘গান’ প্রতিভায় এতো মুগ্ধ ছিল যে, এই ক্যাম্পাসের মানুষদের ধারণা ছিল এই- ছোট্ট ভুবন পেরিয়ে একদিন ঠিকই তারা সারা বাংলাদেশের সব তরুণের মনে ঠাঁই করে নেবে। সারাক্ষণ যে আড্ডাবাজি তারা করে বেড়াতো সেটার প্রাণই ছিল গান। ফলে অবস্থা দিনে দিনে এমন দাঁড়ালো- যেখানেই জিয়া, বুলবুল সেখানেই গান আর হৈ- হুল্লোড়। আর তাদের গান শুনে অনেকেই বলতে থাকলো- “আরে গানগুলোর একটা চিরস্থায়ী রূপ দিয়ে দাও। বাসায় গেলেও যাতে শুনতে পারি।” ফলে এসব কথা-বার্তায় উৎসাহিত হয়ে তারা একটি ব্যান্ডদল হিসেবে নানা জায়গায় পারফর্ম করার সিদ্ধান্ত নিল।এক সময় নিজেদের আরো বেশি করে পরিচিত করার সুযোগ এই গান অন্ত:প্রাণ যুবকদের সামনে আসে। পদাতিক নাট্যচক্র তাদের নাটকের প্রয়োজনে এই ছেলেদের গান করার আমন্ত্রণ জানায়। সুযোগ পেয়ে নিজেদের সেরাটা দিতে মোটেও কার্পণ্য করেনি তারা। তবে মঞ্চে তাদের পরিবেশিত গান শুনে মুগ্ধ দর্শকরা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন- “নতুন এই দলের নাম কী?” তবে গায়কের দল সেদিন বুদ্ধি করে তাদের নামহীন দলের নাম জানালো ‘শিরোনামহীন’। যেহেতু তাদের কোনো নাম নেই তাই এই অভিনব নাম। আর এই কাণ্ডটা ঘটে ’৯৬- এর এপ্রিল মাসে।
বেজ গিটারিস্ট জিয়া বলেন, ‘আমাদের পথচলার শুরুটা ছিল কাঁটাময়। সম্বল ছিল একটা মাত্র গিটার। তবে মনে সাহস জোগাতো আমাদের গান। যেগুলো ছিল ব্যান্ডের হাতিয়ার।’ ’০২ সালের কথা। বুয়েটের কৃতি শিক্ষার্থী সনি মারা গেল দুই দল ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীর গোলাগুলির মাঝখানে পড়ে। আর তার এই মৃত্যু নিয়ে শুরু হয় নোংরা রাজনীতি। এই ঘটনা এবং কাজকর্ম প্রতিবাদী করে তোলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের। বুয়েটের শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদী আন্দোলনে সামিল হয় ‘শিরোনামহীন’ ও। সনি হত্যার বিপক্ষের আন্দোলনে সে সময়ে জিয়ার গিটারের টুং- টাং বা স্যান্টুর (এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র)- এর আওয়াজ সবাইকেই আরও বেশি প্রতিবাদী এবং সনির প্রতি সহানুভূতিশীল করে তোলে।
এ সময় তাদের প্রথম অ্যালবাম ‘জাহাজী’র কাজ চলছিল। নানা অনুষ্ঠানে ‘শিরোনামহীন’- এর সদস্যরা অন্যদের জনপ্রিয় গানগুলো গাওয়ার চাইতে নিজেদের লেখা লিরিকে সুর দিয়ে যে গানগুলো তৈরি হতো সেগুলোই গাইতো। এ প্রসঙ্গে ‘শিরোনামহীন’- এর বক্তব্য, “আমরা সৃষ্টিশীলতায় বিশ্বাস করি। আর সৃষ্টিশীল মানুষের ক্ষেত্রে যা ঘটে, তাই আমাদের ক্ষেত্রে ঘটেছে। আমরা নিজেদের গান করার দিকেই নজর দিয়েছি।”
‘জাহাজী’ অ্যালবামটি করার বিভিন্ন পর্যায়ে দলের পুরোনো সদস্য বুলবুল, মহীন, জুয়েল ব্যান্ড ছেড়ে দেন নানা ব্যক্তিগত কারণে। দলের আরেক সদস্য ফারহান ব্যান্ড ছাড়েন দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘ইচ্ছেঘুড়ি’র কাজ শেষ হওয়ার পরে। আর বিভিন্ন সময়ে ‘শিরোনামহীন’ ব্যান্ডদলে যোগ দেন- গীটার নিয়ে তুষার আর ড্রামার হিসেবে শাফিন। ফলে ‘শিরোনামহীন’- এর এখনকার লাইনআপ- জিয়া (বেসগিটার), তুহিন (ভোকাল), তুষার (গিটার), শাফীন (ড্রামস),দিয়াত(গীটার) এবং রাজীব (কীবোর্ড)।
বর্তমান সদস্যদের বৃত্তান্তঃ
নামঃ তানজীর তুহিন
স্ট্যান্সঃ ভোকাল
এক্স-ব্যান্ডঃ নীল
জন্মতারিখঃ ২৬ সেপ্টেম্বর
মিউজিক সংক্রান্ত ব্যাকগ্রাউন্ডঃ বাফা(নজরুল এবং ক্লাসিক্যাল) -ওস্তাদ আকতার সাদমানী-অজিত রয়-কিরন চন্দ্র রয়-নিয়াজ মোহাম্মাদ চৌধুরী-তপন মাহমুদ-ওস্তাদ নারায়ণ চন্দ্র বাসক-রফিকুল ইসলাম
পেশাঃ আর্কিটেক্ট
শখঃ ছবি আঁকা, গান গাওয়া, টিভি দেখা, খাওয়া।
নামঃ জিয়াউর রহমান
স্ট্যান্সঃ বেজ
এক্স-ব্যান্ডঃ থ্রাসহোল্ড
জন্মতারিখঃ ৭ জানুয়ারি
মিউজিক সংক্রান্ত ব্যাকগ্রাউন্ডঃ লিটন অধিকারী রিন্টুর বই/পঙক্তি/ট্যাবসমুহ
পেশাঃ আর্কিটেক্ট
শখঃ মুভি, চায়ের দোকানে/ ইন্টারনেটে আড্ডা দেওয়া(সংস্কৃতিবিষয়ক)
নামঃ দিয়াত খান
স্ট্যান্সঃ গীটার
এক্স-ব্যান্ডঃ নীল
জন্মতারিখঃ ৩ মে
মিউজিক সংক্রান্ত ব্যাকগ্রাউন্ডঃ এসজিজি(গীটার ইন্সটিটিউশন) থেকে কোর্স
পেশাঃ মিউজিসিয়ান
শখঃ মুভি দেখা, ফুটবল, ঘুড়ে বেড়ানো
নামঃ তুষার
স্ট্যান্সঃ গীটার
এক্স-ব্যান্ডঃ শহর
জন্মতারিখঃ ২৫ অক্টোবর
মিউজিক সংক্রান্ত ব্যাকগ্রাউন্ডঃ দেশি বিদেশি স্বনামধন্য গীটারিস্টদের দ্বারা অনুপ্রাণিত
পেশাঃ আর্কিটেক্ট
শখঃ গীটার বাজানো, মুভি দেখা
নামঃ রাজীব আহমেদ
স্ট্যান্সঃ কি-বোর্ড
এক্স-ব্যান্ডঃ শহর
জন্মতারিখঃ ১ জানুয়ারি
পেশাঃ ডাক্তার
শখঃ গান গাওয়া, মুভি দেখা, পড়াশুনা করা
নামঃ কাজী আহমেদ শাফিন
স্ট্যান্সঃ ড্রামার
এক্স-ব্যান্ডঃ নীল
জন্মতারিখঃ ৩ আগস্ট
পেশাঃ আর্কিটেক্ট এর ছাত্র
শখঃ বাজানো, পড়াশুনা করা
প্রকাশিত গান
এখন পর্যন্ত শিরোনামহীন চারটি পূর্নাঙ্গ অ্যালবামসহ পাঁচটি মিশ্র অ্যালবাম প্রকাশ করেছে।পূর্নাঙ্গ অ্যালবামঃ
- জাহাজী (২০০৪)
জিয়া- বেজ, গীটার, কি-বোর্ড, ড্রামস মিডি সিকুয়েন্স
তুহিন- ভোকাল
তুষার- গীটার
জুয়েল- গীটার
ফারহান- সরোদ, দোতরা
শাফিন- ড্রামস
- ইচ্ছে ঘুড়ি(২০০৬)
জিয়া- বেজ
তুহিন- ভোকাল
তুষার- গীটার
ফারহান- সরোদ
শাফিন- ড্রামস
প্রিন্স- কি-বোর্ড
- বন্ধজানালা(২০০৯)
জিয়া- বেজ
তুহিন- ভোকাল
তুষার- গীটার
রাজীব- কি-বোর্ড
শাফিন- ড্রামস
- শিরোনামহীন রবীন্দ্রনাথ(২০১০)
জিয়া- বেজ
তুহিন- ভোকাল
তুষার- গীটার
রাজীব- কি-বোর্ড
শাফিন- ড্রামস
মিশ্র অ্যালবামঃ
- নিয়ন আলোয় স্বাগতম(২০০৭)- মুঠোফোন
- স্বপ্নচূড়া ২(২০০৬)- গোধূলি
- স্বপ্নচূড়া ৩(২০০৭)- ট্রেন
- বন্ধুতা(২০০৮)- প্রান্তর
- রক ১০১(২০০৮)- কফি হাউজ
- ‘ওয়ার্ল্ড ফর ফুড’ কেম্পেইনের জন্য তাদের গাওয়া গান- চিঠি (২০০৯)
কিছু জনপ্রিয় গানঃ
- বন্ধ জানালা
- বর্ষা
- হাসিমুখ
- পাখি
- ভালোবাসা মেঘ
- বুলেট কিংবা কবিতা
- বাংলাদেশ
- ইচ্ছে ঘুড়ি
- ক্যাফেটেরিয়া
- গোধূলি
- চিঠি
শিরোনামহীন এর কিছু টুকরো খবরঃ
- ’০৫ এরই মার্চে ‘শিরোনামহীন’ ‘এম্পফেস্ট’ নামের এক স্টেজ শো’তে পারফর্ম করে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সে অনুষ্ঠানে প্রায় পয়ত্রিশ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিলেন। ঐ অনুষ্ঠানে তাদের সাথে পাকিস্তানি ব্যান্ডদল ‘জুনুন’ ও ‘স্ট্রিং’ পারফর্ম করেছিলেন।
- শিরোনামহীন এর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন মুকুট এদেশের ব্যান্ডদলগুলোর সংগঠন ‘বামবা’র সদস্যপদ প্রাপ্তি। আর তারা এই সদস্যপদ লাভ করে ৩১ আগস্ট’০৮ তারিখে।
- বন্ধজানালা অ্যালবামটি প্রকাশিত হয় ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯। এই অ্যালবামটি রেকর্ড হয় তাদের নিজস্ব স্টুডিও ‘প্রায় শিরোনাম’-এ। কিছু কাজ বেঙ্গল স্টুডিও, স্টুডিও অচিন এবং Studio Greg Pigott(অস্ট্রেলিয়া)-এ করা হয়।
- ‘বেনসন এন্ড হেজেস স্টার সার্চ’ এর স্টার সার্চ প্রতিযোগীতায় শিরোনামহীন ২০০০ সালে অংশগ্রহন করে এবং তারা সেরা দশটি ব্যান্ডের মধ্যে ছিল।
- শিরোনামহীনের পরবর্তী অ্যালবামের নাম তাদের নিজস্ব ব্যান্ডের নামে হতে পারে। ইতমধ্যে অ্যালবামের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়াও তাদের নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মান করছে নোমান।
- ‘সুপ্রভাত’ গানটি শরীফুল করিম শাওনের ‘চক্র’ ছবিতে ‘টাইটেল সং’ হিসেবে ব্যাবহার করা হবে।
No comments:
Post a Comment